চিকিৎসক-ক্রিকেট ও রাগবি বিশ্বকাপার! বাবার মতো ময়দান কাঁপাতে তৈরি জ্যাকেও


শুরু হয়েছে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ। অনেক প্রাক্তন-বর্তমান ক্রিকেটারের পরিবারের সদস্যও রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আলাদা করে আলোচনা জ্যাকেও ভ্যান বুরেনকে নিয়ে। এর কারণ তাঁর বাবা রুডি ভ্যান বুরেন। তিনি আবার বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। পেশায় চিকিৎসক, খেলেছেন ক্রিকেট এবং রাগবি! জোড়া খেলায় বিশ্বকাপে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এ বার দক্ষিণ আফ্রিকায় অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে বাবার মতোই ময়দান কাঁপাতে তৈরি জ্যাকেও ভ্যান বুরেন। বিস্তারিত জেনে নিন TV9 Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।

ছেলেকে নিয়ে বেশি লেখা প্রয়োজন নাকি বাবাকে নিয়ে! এখানে বোধ হয় বাবাকে নিয়েই। বিশ্বের একমাত্র অ্যাথলিট রুডি ভ্যান বুরেন যিনি রাগবি এবং ক্রিকেট বিশ্বকাপে খেলেছেন। কাকতলীয় হলেও ছেলেও খেলছেন সেই দক্ষিণ আফ্রিকাতেই। ২০০৩ সালে বিশ্বকাপ হয়েছিল রেনবো নেশনে। নামিবিয়ার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন রুডি। পাকিস্তানের তৎকালীন অধিনায়ক ওয়াকার ইউনিসকে বলেছিলেন, তাঁর দুই সতীর্থ পেসার ওয়াসিম আক্রম এবং শোয়েব আখতারের বলের গতি কম! আর এই ঘটনার ছ’দিন পরই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে শোয়েব আখতার একটি ডেলিভারি করেন যার গতি ছিল ১০০.২ মাইল/ঘণ্টা। কিলোমিটারে ১৬১.৩/ঘণ্টার ডেলিভারি! বিশ্বের দ্রুততম ডেলিভারি সেটিই।

বিশ্বকাপের মঞ্চেই ওয়ান ডে অভিষেক হয়েছিল রুডি ভ্যান বুরেনের। সেটি পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই। অভিষেক ম্যাচে পাকিস্তান অধিনায়ককে শোয়েবের গতি নিয়ে বলেছিলেন! সেই ম্যাচটা তাঁর কাছে অন্য দিক থেকেও স্মরণীয়। কেরিয়ারে খেলেছেন মোট ৫টি ওডিআই। অভিষেক ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ২৫৬ রান তাড়া করতে নামে নামিবিয়া। মাত্র ৪২ রানের মধ্যেই ৯ উইকেট হারায় নামিবিয়া। রুডি নামেন শেষ উইকেট হিসেবে। বিবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রুডি সেই ম্যাচের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘তখনও অবধি বিশ্বকাপের মঞ্চে সর্বনিম্ন স্কোরের রেকর্ড ছিল ৪৫ রান। আমি নামার সময় টিম ম্যানেজার বলেন-ডাক্তার, আমাদের ওই রেকর্ডের বাইরে রেখো।’

টিম ম্যানেজার বোধ হয় রুডিকে মনে করিয়ে দিতে ভুলে গিয়েছিলেন, ওয়াকার-ওয়াসিমদের মতো কিংবদন্তিদের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ হয়েছে। ফলে রুডি যেন স্লেজিং না করেন। রুডি স্লেজিং করেছিলেন, তাও আবার শোয়েব আখতারের বলের গতি নিয়ে! রুডির কথায়, ‘ড্রিংকস বিরতিতে ওয়াকার ইউনিসকে বলি-এই পেসারদের দিয়ে আমাকে আউট করা যাবে না। কোনও স্পিনার আনলে কাজ হতে পারে। শোয়েবের বোলিংয়ে গতি নেই। আমার কথা শুনে ওয়াকার প্রচণ্ড রেগে গিয়েছিল।’

শোয়েব আখতার রেগে বোলিং করছিলেন। ওয়াসিমও! শোয়েবের একটি ডেলিভারি প্রায় ১৫৯কিমি/ঘণ্টা ছিল। শোয়েবের পাঁচটি এবং ওয়াসিম আক্রমের ১১টি ডেলিভারি খেলেছিলেন। দু-জনকেই বাউন্ডারি মারেন। ওয়াকার ইউনিস বাধ্য হয়েই স্পিনার সাকলিন মুস্তাককে আক্রমণে আনেন। ১৭.৪ ওভারেই অলআউট হয়েছিল নামিবিয়া। শেষ উইকেটে বিয়ন কোৎজের সঙ্গে ৪২ রানের জুডি গড়েছিলেন রুডি। তাঁকে আউট করেছিলেন স্পিনার সাকলিন মুস্তাকই!

২০০৩ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচ উইকেট রুডি ভ্যান বুরেনের। PC-ICC

দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলেছিল নামিবিয়া। বেরহায় সেই ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন রুডি ভ্যান বুরেন। ভারতের বিরুদ্ধেও খেলেছেন ২০০৩ বিশ্বকাপে। মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ৩১১ রান তুলেছিল ভারত। বীরেন্দ্র সেওয়াগ এবং সচিন তেন্ডুলকরের উইকেট দুটি নিয়েছিলেন রুডিই। সেওয়াগ ২৪ রানে ফিরলেও সচিন ১৫২ রানের ইনিংস খেলে আউট হয়েছিলেন। অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও সেঞ্চুরি করেছিলেন সেই ম্যাচে।

২০১৮ সালে নামিবিয়া ক্রিকেট সংস্থার প্রেসিডেন্টের দায়িত্বও সামলেছেন রুডি। জ্যাকেওর উত্থানে যে বাবার অবদান, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ক্রিকেটের পাঠ থেকে অন্যান্য সবরকম ভাবেই ছেলেকে তৈরি করেছেন। বেশ কয়েকটি ভাষা জানেন জ্যাকেও। সৌজন্যে বাবা রুডি। যুব বিশ্বকাপে ছেলে সাফল্য পাবে, বিশ্বাস রয়েছে রুডির। আইসিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রুডি বলেন, ‘ও দারুণ পারফর্ম করছে। রান পাচ্ছে, উইকেটও নিচ্ছে। বিশ্বকাপে নামার জন্য উত্তেজনায় ফুটছে। নিজেকে মানসিক ভাবেও প্রস্তুত করেছে।’

গত নভেম্বরে ভারতে এসেছিল নামিবিয়া অনূর্ধ্ব ১৯ টিম। কর্ণাটকে প্রীতি ম্যাচ খেলেছে। সেই টুর্নামেন্ট থেকে জ্যাকেওর ব্যাটিং-বোলিংয়ে আরও বেশি উন্নতি হয়েছে বলে মনে করেন রুডি ভ্যান বুরেন। এ বার যুব বিশ্বকাপে ছেলের সাফল্য দেখার প্রত্যাশায় রুডি।



Leave a Reply