বেকেনবাওয়ারকে বিশেষ শ্রদ্ধাImage Credit source: AP
তিনিই বদলে দিয়েছিলেন জার্মান ফুটবলের চেহারা। ফুটবল দুনিয়া ‘কিংবদন্তী’ বলেই চিনতেন তাঁকে। পায়ে ছিল ম্যাজিক। না ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন জার্মানির বিখ্যাত ফুটবলার ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার, যাঁকে ‘দের কাইজার’ নামে ডাকতেন ভক্তরা। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। ১৯ জানুয়ারি, শুক্রবার জার্মানিতে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। ২০ বছর বয়সে ফুটবলে পা রাখেন বেকেনবাওয়ার। মিডফিল্ডার হিসেবে শুরু। তাঁকে গোটা বিশ্ব চিনল ১৯৬৬ সালে। বিশ্বকাপে চার-চারটি গোল। টুর্নামেন্টের সেরা তরুণ প্লেয়ার হিসেবে উত্থান। এরপরই পশ্চিম জার্মানির ফুটবল টিমের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে ওঠেন তিনি। মাঝমাঠের প্লেয়ার হলেও দক্ষতার জোরে হয়ে ওঠেন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার। সময় যত গড়িয়েছে, ততই বেড়েছে ধার। তিনিই জার্মানির একমাত্র ডিফেন্ডার যিনি দু’বার জিতেছিলেন ‘ব্যালন ডি অর’।
জার্মান ফুটবলের অন্যতম অনুপ্রেরণার নাম বেকেনবাওয়ার
মূলত ডিফেন্স থেকে পুরো খেলা নিয়ন্ত্রণ করতেন বেকেনবাওয়ার। বিশ্বের তিনজন ফুটবলারের মধ্যে তিনি একজন, যিনি খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে বিশ্বকাপ জিতেছেন। ১৯৭৪ সালে বিশ্বকাপজয়ী জার্মানি টিমের ক্যাপ্টেন ছিলেন বেকেনবাওয়ার। ১৯৯০ সালে তাঁর কোচিংয়ে বিশ্বকাপ জেতে জার্মানি। পশ্চিম জার্মানির হয়ে খেলেছেন ১০৩ ম্যাচ। এর মধ্য়ে একবার বিশ্বকাপ ও ইউরো কাপ জিতেছিলেন। শুধু জাতীয় দলই নয়, বায়ার্ন মিউনিখ উত্থানেও তাঁর অবদান অস্বীকার করা যাবে না। শুধু জার্মানি নয়, গোটা বিশ্বে বায়ার্ন মিউনিখের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল বেকেনবাওয়ারের হাত ধরেই। বায়ার্নের হয়ে ৪২৭টি ম্যাচ খেলেছিলেন বেকেনবাওয়ার। তাঁর সময়ে চারটি বুন্দেসলিগা ও চারবার ইউরোপিয়ান কাপ পায় বায়ার্ন।
১৯৮১-৮২ সালের পরই দুরন্ত কেরিয়ারে ইতি টানেন বেকেনবাওয়ার। কিন্তু ফুটবল থেকে সরে দাঁড়াননি তিনি। তাঁর কোচিংয়ে জার্মানির যেমন বিশ্বকাপ জেতে, ১৯৯৩-৯৪ মরসুমে বায়ার্ন মিউনিখও জেতে বুন্দেসলিগা। ম্য়ানেজার হিসেবে কেরিয়ার শেষ হলেও ফুটবলের সঙ্গ ছাড়েননি। তারপরও অবদান রেখেছেন ফুটবলে। জার্মানি যখন আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় চরম সাফল্যের মুখ দেখছে, তখন ওই দলের প্রশাসনিক মাথা বেকেনবাওয়ার।
বেকেনবাওয়ারকে News9-এর বিশেষ শ্রদ্ধা
শুক্রবার বায়ার্ন মিউনিখের তরফে বেকেনবাওয়ারের স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জার্মানির ফুটবলার ও ফুটবল-বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। News9-এ এক বিশেষ বিভাগে প্রদর্শিত হয়েছে সেই স্মরণসভা। বুন্দেসলিগার সিনিয়র অ্যাডভাইজার পিটার লিবল, এশিয়া-পেসিফিকের হেড জুলিয়া ফার, জার্মানির ফুটবল বিশেষজ্ঞ বিয়র্ন ব্রেমার ও অ্যানসেম কুচলে বিশেষ সাক্ষাৎকারে News9-কে শোনান বেকেনবাওয়ারের জীবনের গল্প। জানালেন, কেন বেকেনবাওয়ার আর পাঁচজন ফুটবলারের থেকে আলাদা।
লিবল উল্লেখ করেছেন, বেকেনবাওয়ার সবাইকে সমান মর্যাদা দিতেন, আর সেটাই পছন্দ করতেন তিনি। মানুষ হিসেবে বেকেনবাওয়ারের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘আমার বেশ কয়েক বার ওঁর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ হয়েছিল। এত বিপুল সাফল্যের পর এতটুকু ঔদ্ধত্য ছিল না ওঁর মধ্যে। কে কোন পদে আছেন, তা বিচার না করে সবার সঙ্গে সমান ব্যবহার করতেন বেকেনবাওয়ার।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, মাঠে প্রবেশ করে প্রথমেই সাধারণ কর্মীদের সঙ্গে হাত মেলাতেন বেকেনবাওয়ার, তারপর বিশিষ্টদের সঙ্গে। তাঁর এই ব্যবহার বেকেনবাওয়ারের ফুটবলার বা কোচ হিসেবে করা রেকর্ডগুলোর থেকে বেশি উল্লেখযোগ্য বলে মনে করেন লিবল।