ডার্বির দুই মুহূর্ত। পাঁচ বছর পর কলকাতা ডার্বি ড্র। ছবি রাহুল সাধুখাঁImage Credit source: Rahul Sadhukhan
অভিষেক সেনগুপ্ত
তখনও আইএসএলের জন্ম হয়নি। তখনও বেঙ্গালুরু এফসি নামের কোনও টিম উঠে আসেনি। ভারতীয় ফুটবল তখন ছিল ইস্ট-মোহনের জিম্মায়। প্রতিবছর দলবদল এলেই শোনা যেত, এক ব্রাজিলিয়ানকে এ বার ছিনিয়ে নিতে বাজারে নেমে ইস্টবেঙ্গল। গঙ্গা পারের ক্লাবের এসে যিনি প্রথম উঠেছিলেন, তিনি সেখানেই থেকে গিয়েছিলেন। পেশার দাবি, অর্থের হাতছানি থাকলেও হোসে ব়্যামিরেজ ব্যারেটো বাগান ছেড়ে যাননি। এক যুগ পর সেই আক্ষেপ মুছিয়ে দিলেন আর এক ব্রাজিলিয়ান। ব্যারেটোর মতো ডার্বিতে ১৭ গোল করতে পারবেন? ৩৬ বছরের বিদেশিকে নিয়ে এ প্রশ্ন রাখাই যাবে না। তা না হোক, জন্মদিনে ইস্টবেঙ্গলকে আবার ডার্বি উপহার দিয়ে গেলেন ক্লেটন সিলভা। বিস্তারিত জেনে নিন TV9Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।
এ মরসুমের প্রথম আইএসএল ডার্বি ক্লেটন বন্দনাতেই শেষ হতে পারত। যদি ৮৯ মিনিটের হেডটা বিপক্ষের জালে রাখতে পারতেন। গোলের খাতায় লিখতে পারতেন আরও একবার নাম। হল না! ডার্বি তো এই কারণেই রোমাঞ্চকর। পরতে পরতে থ্রিলার। আট ম্যাচ টানা ডার্বি জয়ের রেকর্ড আগেই ভেঙেছে। সে বার নন্দকুমারের গোলে এসেছিল জয়। এ বার আইএসএলে টানা ৬টা ডার্বি হারের পর যুবভারতীতে জয়ের মশাল জ্বালিয়ে দিতে পারত লাল-হলুদ। একদিন আগেই হুঙ্কার দিয়েছিলেন, ‘আমি কখনও ডার্বি হারিনি’। সেই আন্তোনিও হাবাস তার রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রেখে গেলেন ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে।
আইএসএের প্রথম ডার্বিতে যুবভারতী দখলের প্রচ্ছন্ন হুমকি ছিল কুয়াদ্রাতের। বাগান সমর্থকদের মাঠে আসার নিয়মন্ত্রণও জানিয়েছিলেন। আর হাবাসের ছিল বদলার আগুন। দুইয়েরই টক্কর দেখা গেল। কার্ড, ফাউলের রেষারেষিতে গোলের দরজাও খুলল বারবার। সুপার কাপের ডার্বিতে চোট ও এশিয়ান কাপের জন্য আট ফুটবলার খেলাতে পারেন মোহনবাগান। এ বার পুরো দলবল নিয়ে নেমেছিলেন হাবাস। দু-দু’বার পিছিয়ে পড়েও মোহনবাগান ২-২ রেখে গেল ডার্বিটা। দিমিত্রি পেত্রাতোসের জন্য। ০-১ থেকে ১-১ হয়েছিল। সেখান থেকে আবার ১-২ও। খেলার তখন আর মিনিট কয়েক বাকি। সেখান থেকে দুরন্ত গোলে টিমকে সমতা দিলেন পেত্রাতোস। নন্দকুমারের কাছ থেকে বল কেড়ে ক্রস পাঠান সাহাল। চুংনুঙ্গা ক্লিয়ার করতে পারেননি। তাঁর গায়ে লেগে চলে যায় পেত্রাতোসের কাছে। জোরালো শটে গোল করেন পেত্রাতোস। ৮৭ মিনিটে ২-২। স্কোরলাইনে আর বদল হল না।
ইস্টবেঙ্গল-২ : মোহনবাগান-২
(অজয় ৩, ক্লেটন-পেনাল্টি ৫৪) (সাদিকু ১৭, পেত্রাতোস ৮৭)
ডুরান্ড কাপ থেকে সুপার কাপ– স্কোরলাইন ছিল ২-১। চতুর্থ ডার্বি ড্র। সুপার কাপ জয়ের আত্মবিশ্বাস নিয়েই ম্যাচ শুরু করেছিল ইস্টবেঙ্গল। ৩ মিনিটে নিশু কুমারের ক্রস থেকে অজয় ছেত্রীর গোল। বাগানের হামিল সামনেই দাঁড়িয়েছিলেন। মার্কিং করতে পারলেন না কেন, প্রশ্ন উঠবে। বেঙ্গালুরু এফসির অ্যাকাডেমি থেকে উত্থান মণিপুরের ছেলে অজয়ের। ইস্টবেঙ্গলে খেলে গিয়েছিলেন ২০২১ সালে। কিন্তু সে ভাবে মেলে ধরতে পারেনি পাহাড়ি মিডিও। এ বার পারলেন। ১৭ মিনিটে প্রায়শ্চিত্ত করলেন হামিল। বড় বক্সের বাইরে থেকে ক্রস তোলেন তিনি। আর্মান্ডো সাদিকু সাইড ভলিতে গোল করে যান। ১-১ স্কোরলাইনের আগেই অবশ্য বাগানে ধাক্কা লেগেছিল। ১৩ মিনিটে হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পাওয়া আনোয়ার আলিকে তুলে নামাতে হল আমনদীপকে। প্রথমার্ধে ১-১ স্কোর ৫০ মিনিটে ২-১ করে ফেলতে পারত মোহনবাগান। সাদিকু, পেত্রাতোস যুগলবন্দিতে প্রায় গোল হয়েও যাচ্ছিল। কোনও রকমে গোললাইন সেভ চুংনুঙ্গার। ৫ মিনিট পরেই ২-১ ইস্টবেঙ্গলের। মহেশকে অযথা ফাউল করেন নাওরেম। তাঁর ঘাড়ের উপর উঠে পড়েন দীপক টাংরি। ৫৫ মিনিটে পানেনকা কিকে গোল ক্লেটনের।
অনেক দিন পরই সুখের ফুটবল উপহার দিয়ে দিয়ে গেল দুটো টিম। অযথা ডিফেন্সিভ নয়, অকারণে আত্মসমর্পণ নয়। গোলের জবাবে গোল। ফিরে আসার তীব্র আকঙ্খা। এই না হলে ডার্বি। চার গোলের ডার্বি তৃপ্তি দিয়ে গেল।
মোহনবাগান- বিশাল, আনোয়ার, হামিল, অনিরুদ্ধ, পেত্রাতোস, শুভাশিস, সাহাল, দীপক, কিয়ান, হেক্টর, সাদিকু।
ইস্টবেঙ্গল: গিল, রাকিপ, হিজাজি, নিশু, চুংনুঙ্গা, পেদ্রো, অজয়, ক্রেসপো, নাওরেম, ক্লেটন, নন্দকুমার।