ধোনির নতুন ভূমিকা, বিরাট প্রত্যাবর্তন; চিপকের ‘সবুজ আভায়’ অন্য অধ্যায়


সব যেন এক লহমায় বদলে গিয়েছে। মহেন্দ্র সিং ধোনি এমনই। অনেকে বলছেন, নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ালেন ধোনি। আসলে যেটা বলা উচিত, ঋতুরাজ গায়কোয়াড়কে এগিয়ে দিলেন লিডার। কাগজে কলমে, টিম লিস্টে ধোনির নামের পাশে ক্যাপ্টেন লেখা থাকবে না, তিনি টস করতেও আসবেন না। কিন্তু লিডার সব সময়ই লিডার, চেন্নাই সমর্থকদের প্রিয় ‘থালা’।

নতুন ভূমিকা সম্পর্কে যেটুকু অনুমান করা যায়, ঠিক যেমন জাতীয় দলে বিরাট কোহলির ক্ষেত্রে করেছিলেন এখানেও হয়তো তাই করবেন। চেন্নাই সুপার কিংসের ব্যাটন তুলে দিয়েছেন ঋতুরাজ গায়কোয়াড়কে। জাতীয় দলে বিরাট অধিনায়ক হলেও ধোনি টিমে থাকাকালীন তিনি ছিলেন লিডার। প্রিয় ‘চিকুকে’ পরামর্শ দিয়ে যেতেন, বিরাট সঠিক মনে করলে, সেই পরামর্শ মেনে সিদ্ধান্ত নিতেন। ধোনি-ঋতুরাজ সেই কেমিস্ট্রি দেখার অপেক্ষায়।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের নতুন মরসুম শুরু হয়েছে আজ। অনেক বিষয়েই নজর থাকবে। একটা বিষয় শুরুতেই বলা হল। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে, একটা পরিসংখ্যান। ২০০৮ সাল অর্থাৎ উদ্বোধনী আইপিএলের পর থেকে চেন্নাইয়ের মাঠে চেন্নাই সুপার কিংসকে হারাতে পারেনি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। ক’দিন আগেই আরসিবির আনবক্সিং অনুষ্ঠানে সরকারি ভাবে টিমের নাম পরিবর্ত হয়েছে আরসিবির। এখন আর তারা রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ‘ব্যাঙ্গালোর’ নয়, ‘বেঙ্গালুরু।’ পরিসংখ্যানও বদলাবে কিনা, নজর সেদিকেই।

ফাফ ডুপ্লেসি এবং বিরাটের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। চিপকের পিচ স্পিনারদের স্বর্গ। কিন্তু এ বার সবুজ আভা কিছুটা যেন ধোঁয়াশায় রাখছে। বিরাট, ডুপ্লেসি দু-জনই গতিময় পিচে খেলা পছন্দ করেন। বল ঠিকঠাক ব্যাটে আসবে, এমন পিচ পছন্দ। গত মরসুমে আরসিবির এই ওপেনিং জুটি দারুণ সফল। নতুন সফরে তাদের কাছে চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। ডুপ্লেসির প্রাক্তন টিম সিএসকে। চিপকের পরিবেশ পরিস্থিতি তাঁর অনেক বেশি জানা। যদিও প্রতিপক্ষ ক্যাপ্টেন হিসেবে চেন্নাইয়ের মাঠে এটিই তাঁর প্রথম পরীক্ষা।

বিরাট কোহলি ব্রেক থেকে ফিরেছেন। জানুয়ারিতে শেষ বার প্রতিযোগিতা মূলক ক্রিকেট খেলেছেন। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে শেষ দুটি টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন। এ বারের আইপিএল তাঁর কাছে সব দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ। এটি আইপিএলের ১৭তম সংস্করণ, বিরাটেরও। জন্মলগ্ন থেকে খেললেও ট্রফি জয়ের স্বাদ পাননি। এ বার উইমেন্স প্রিমিয়ার লিগ জিতেছে আরসিবি। বিরাটদের দায়িত্ব যেন আরও বেড়েছে। কিন্তু চিপকের পিচে সবুজ আভা যদি শুধুই দেখানোর জন্য হয়!

স্পিনের বিরুদ্ধে বিরাটের পারফরম্যান্স আশানুরূপ নয়। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে শেষ যে টি-টোয়েন্টি দুটি খেলেছিলেন, তাতে বিরাট ইনিংসও খেলতে পারেননি কোহলি। ফলে একটা বাড়তি চাপ নিয়েই নামবেন। সঙ্গে বিশ্বকাপের স্কোয়াডে জায়গা পাওয়ার দৌড়ে টিকে থাকারও লড়াই। যেটা শুরু হয়ে যাচ্ছে আজই।

দলগত দিক থেকে চেন্নাই সুপার কিংস অনেক বেশি ব্যালান্সড। ঋতুরাজের সঙ্গে ওপেনিংয়ে দেখা যেতে পারে রাচিন রবীন্দ্রকে। তিনে অজিঙ্ক রাহানের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটার। তবে চেন্নাই টিমে পার্থক্য় গড়ে দিতে পারেন শিবম দুবে। গত বার শুধু ব্যাটিংয়ে কাজে লাগানো হয়েছিল। সামান্য চোট থাকায় ঝুঁকি নেওয়া হয়নি। এ মরসুমে ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতি ক্রিকেটে বোলিং করেছেন, সাফল্যও পেয়েছেন। ফলে অলরাউন্ডার শিবমকেই হয়তো পাওয়া যাবে।

আরসিবির ক্ষেত্রে বলা যায়, তাদের ব্যাটিং বিভাগ মূলত টপ থ্রি নির্ভরশীল। বিরাট, ডুপ্লেসি, ম্যাক্সওয়েল দ্রুত ফিরলে মিডল অর্ডারে হাল ধরার লোকের অভাব। দীনেশ কার্তিক সেই দায়িত্বটা নিতে পারবেন কিনা, সেদিকেই নজর। বোলিংয়ের ক্ষেত্রে বলা যায়, মহম্মদ সিরাজের সঙ্গে বিদেশি পেসার হিসেবে দেখা যেতে পারে আলজারি জোসেফকে। সঙ্গে অলরাউন্ডার ক্যামেরন গ্রিন রয়েছেন। মুম্বই ইন্ডিয়ান্স থেকে ট্রেডিংয়ে নেওয়া হয়েছে গ্রিনকে। মিডল অর্ডার ব্যাটিং এবং তৃতীয় সিমারের কাজটা তাঁকেই পালন করতে হবে। আরসিবির সবচেয়ে বড় সমস্যা, ভালো মানের স্পিনার নেই। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি নজর থাকবে বোলিংয়েও।

Leave a Reply