পরশ স্যারের পরশে একঝাঁক অটিজ়ম বাচ্চা পেল নতুন ‘জীবন’!


প্রীতম দে

ক্যারাটের গুরুকুল বলতে পারেন। পরশ মিশ্র আর তাঁর সহধর্মিণী নিজের সন্তানের মতো করে ক্যারাটে শেখান দীপালি, স্নেহা, সোনালিদের। এদের অনেকেরই ঠিকানা হোম বা অনাথ আশ্রম। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে ক্যারাটেকেই হাতিয়ার করেছে এরা। পরশ কোনও পারিশ্রমিক ছাড়াই মার্শাল আর্টের পাঠ দিচ্ছেন। এরা বিশেষ ভাবে সক্ষম। অনেকে এখনও বলেন মানসিক প্রতিবন্ধী। অটিজ়ম আক্রান্ত এই কচিকাঁচারা ক্যারাটে লড়তে জানে। শেখানো সহজ ছিল না মোটেই। স্যার পরশ মিশ্র হাল ছাড়তে রাজি ছিলেন না। তাঁর অদম্য ইচ্ছেতেই দীপালি, স্নেহারা আজ লড়াই করার রসদ পেয়ে গিয়েছে!

একঝাঁক বাচ্চাকে ক্যারাটে শেখানোর জন্য কোনও পারিশ্রমিক নেননি পরশ। কেন নেননি, তার কারণ ব্যাখ্যা নিজেই করলেন। পরশ বলে দিলেন, “বিগত কুড়ি বছর ধরে ক্যারাটে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। অনেকেই আছে যারা পয়সার অভাবে ক্যারাটে শিখতে পারে না। অথচ আত্মরক্ষার প্রয়োজনে তাদেরই সবার আগে ক্যারাটে শেখা দরকার। সুন্দরবন, সন্দেশখালি সংলগ্ন গ্রাম থেকে অনেক মেয়েই ক্যারাটে শেখে আমার কাছে। আমিই তুলে এনেছি অনেককে”।

চলছে চতুর্থ ক্যালকাটা কাপ ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপ। ৪০০ জন প্রতিযোগী অংশ নিয়েছে এতে। তার মধ্যে রয়েছে এই বিশেষ অংশগ্রহণকারীরা। মার্শাল আর্ট, কালারি পায়াতু ক্যারাটের কৌশলও দেখানো হয়। এই ছোটদের দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি ইন্দিরা বোস বলেন, “ওদের সেলফ কনফিডেন্স বেড়েছে অনেকটা। ওদের ভাব প্রকাশের একটি অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠছে এই ক্যারাটে।” শুধু অটিস্টিক বাচ্চারাই নয় পরশ স্যারের পাঠশালায় শিখছেন আরও অনেকেই। ইচ্ছে থাকলেও বিভিন্ন কারণে শিখতে পারে না যারা। পরশ স্যার সুন্দরবন অঞ্চলের গ্রামের মেয়েদের ট্রেনিং দিচ্ছেন আত্মরক্ষার ক্যারাটে।

আকারে ইঙ্গিতে দীপালি জানায় সে খুশি। কেউ তাকে আক্রমণ করলে যে আর পার পাবে না, এটা নিশ্চিত। প্রতিযোগিতায় হাতেনাতে প্রমাণ পাওয়া গেল। স্নেহা তার মারপ্যাঁচে কুপোকাত করে দিল প্রতিপক্ষকে। ক্যারাটের মধ্যে শক্ত ঘরানার কালারি পায়াতু। ঢাল তলোয়ার নিয়ে লড়তে হয়। দীপালিদের জন্য খানিকটা ঝুঁকির হলেও তাদের উৎসাহ আছে। তাই হাতে নিয়ে পরখ করল ওরা । স্নেহা ও সোনালিও তাদের আনন্দ চেপে রাখতে পারেনি। ওরাও লাল গ্লাভস, লাল হেড গার্ড, প্যাড পরে প্র্যাকটিস করতে শুরু করে। ওদের রেডি করছিলেন পরশ বাবুর ছাত্রী, এখন প্রশিক্ষক সুন্দর বনের মেয়ে। যা দেখে অতিথিরাও বিস্মিত।

প্রাক্তন ফুটবলার মেহতাব হোসেন পর্যন্ত মুগ্ধতা নিয়ে বলেন, “এরা যে হার্ডওয়ার্ক করছে, তার কোনও বিকল্প নেই। কোনও লাভ হোক না হোক এই স্পিরিটটাই আসল। আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করব, এদের আরও সুযোগ সুবিধা দেওয়া হোক। ক্যারাটে বা যে কোনও অন্য খেলায় এদের বেশি সংখ্যায় নেওয়া দরকার।”

Leave a Reply