দেশের ফুটবলে আমার জায়গাটা কে নেবে, দেখার অপেক্ষায় থাকব


কলকাতা: কথা বলতে বলতে থেমে যাচ্ছেন। আবেগ আঁকড়ে ধরছে। মনে বয়ে চলেছে ঝড়। শুরুর দিনগুলোয় কেউ কি ভাবেন, কবে শেষ করবেন? তিনিও ভাবেননি। ভাবনা তখন আসে, যখন শরীর জবাব দেয়। ফিসফিস করে বলতে শুরু করে, আর পারছি না, এ বার থামো। ক্লান্তি? চোট? নাকি স্রেফ বয়স থাবা বসিয়েছে জেদে? কখনও চোখ ভিজে যাচ্ছে তাঁর। হঠাৎ ঘিরে ধরছে খণ্ড নীরবতা। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে কিছু শব্দ উগড়ে দিচ্ছেন। বিড়বিড় করে বলছেন, ‘১৯টা বছর…!’ ১৯টা বছর? ২০০৫ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে পা রেখেছেন জাতীয় টিমে। চোখের পলকে সুনীল ছেত্রী পার করে দিলেন ১৯টা বছর! তিনি বিস্মিত যত না, ভারতীয় ফুটবল প্রেমীরা তার থেকেও অনেক বেশি। ফুটবলারের কেরিয়ার, সাফল্যের সপ্তমস্বর্গে থেকেও এতটা লম্বা হতে পারে? অবসর ঘোষণার পর কী বললেন সুনীল?

যদি বিরাট কোহলি কোনও টুইট করেন, সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল হয়ে যায়। ক্রিকেটারদের অনেকেই তারকার আসনে বসে পড়েছেন। ফুটবলে সেই জায়গা একমাত্র সুনীলের। অবসর ঘোষণা করে যে ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন, চোখের পলকে ভাইরাল। ঠিক যেমন, তাঁর গোলের ভিডিয়ো-ছবি হয়। তাতে সুনীল বলে দিলেন, ‘ভারতের হয়ে খেলা প্রথম ম্যাচ এখনও ভুলতে পারিনি। ম্যাচের দিন সকালে কোচ আমাকে ঘরে ডেকে বলেছিলেন, তুমি খেলছ। সেই পুরোটা দিন, ব্রেকফাস্ট থেকে লাঞ্চ, মাঠে নামা, খেলা, এবং অভিষেক ম্যাচে ৮০ মিনিটে গোল পাওয়া, আমি কখনও ভুলতে পারিনি। জীবনের সেরা মুহূর্ত। আজ বারবার ঘুরে আসছে দিনটা। বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে সব কিছু।’

১৯ বছর ধরে খেলবেন দেশের হয়ে, ভাবেননি কখনও। সুনীল বলছেন, ‘১৯ বছর ধরে দায়িত্ব, চাপ আর সাফল্যের অবিশ্বাস্য মিশেলের মধ্যে কেটেছে। আমি কখনও ভাবিনি, দেশের হয়ে এতটা লম্বা খেলব। এতগুলো ম্যাচ খেলব। এত গোল করব। গত দেড়-দু’মাস ধরেই ভাবছি। শেষ পর্যন্ত অবসরের সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছি, এটাই দেশের হয়ে আমার শেষ ম্যাচ। আমার মা, বাবা, স্ত্রীকে বললাম, এটাই শেষবার খেলব। এমন নয় যে, আমি ক্লান্ত, কিংবা অন্য কিছু। কিন্তু একদিন থামতেই হত। এই সিদ্ধান্তটা নিতে গিয়ে কষ্ট পেয়েছি। আর খেলব না দেশের হয়ে, এর থেকে আক্ষেপের আর কী থাকতে পারে। এখন থেকে যতবার জাতীয় টিমের ট্রেনিংয়ে নামব, উপভোগ করব।’

যাঁদের সঙ্গে খেলেছেন দেশের হয়ে, যাঁদের কোচিংয়ে খেলেছেন, তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সুনীল। ‘আমি যখন দেশের হয়ে প্রথম খেলি, বেঙ্কটেশ ছিল ক্যাপ্টেন। বাইচুং ভুটিয়া থেকে সুব্রত পাল, এনপি প্রদীপ, স্টিফেন ডায়াস— অনেক তারকার সঙ্গে খেলেছি। এরা সব সময় পাশে থেকেছে। এরা না থাকলে আমি এই জায়গায় পৌঁছতাম না। কোচ বব হাউটন, আর্মান্দো কোলাসো, স্টিফেন কনস্ট্যান্টাইন, ইগর স্টিমাচরাও পাশে থেকেছেন সব সময়। ২০ বছর বয়সে অভিষেক হয়েছিল। এখন ৩৯ বছর। যারা ভেবেছিল, আমার অবসর নেওয়া উচিত, তারা খুশি হবে হয়তো। যারা ভেবেছিল, আমি পারব, তাদের জন্যও খুশি। যারা আস্থা রেখেছিল, তাদের জন্য গর্বিত।’

সুনীল কী চান? দুটো জিনিস দেখতে চান খুব তাড়াতাড়ি। এক, তাঁর অবসর ম্যাচে যেন গ্যালারিতে হাজির থাকে পরিবার এবং তাঁর ছেলে আর? সুনীলের কথায়, ‘দেশের ফুটবলে আমার জায়গাটা কে নেবে, সেটাই দেখার অপেক্ষা থাকবে। নাম্বার নাইন হিসেবে কে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, দেখতে চাই।’



Leave a Reply