এক যুগ পর দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ জেতার সুযোগ এসেছিল ভারতের সামনে। টানা দশ ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠেছিল ভারতীয় দল। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হার। হতাশায় উইকেট থেকে বেল সরিয়ে দিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছিলেন বিরাট। কিন্তু ট্রফি জিততে না পারলে ব্যক্তিগত মাইলফলকের গুরুত্ব থাকে না। বিরাটের কেরিয়ারে নানা প্রাপ্তির মাঝেও অধরা আইপিএল ট্রফি। টানা আধডজন ম্যাচ জিতে প্লে-অফ নিশ্চিত করেছিল আরসিবি। পুরো টুর্নামেন্টেই দুর্দান্ত খেলেছেন বিরাট কোহলি। কিন্তু ট্রফির ম্যাচের আগেই থামতে হল। আমেদাবাদে বিশ্বকাপ হতাশার মাঠেই এলিমিনেটরে রাজস্থান রয়্যালসের কাছে হারে এ বারের মতো বিদায়। ১৮ নম্বর জার্সির অপেক্ষা বাড়ল। একই ভাবে বেল সরালেন বিরাট। স্নায়ুর চাপ সামলে কোয়ালিফায়ারের যোগ্যতা অর্জন করল রাজস্থান রয়্যালস।
ইনিংসের পঞ্চম ওভারে ক্যাডমোরের সহজ ক্যাচ ফেলেন ম্যাক্সওয়েল। সে সময় মাত্র ১১ রানে ব্যাট করছিলেন টম কোহলার ক্যাডমোরে। পরের ওভারেই অবশ্য স্লো-ইয়র্কারে তাঁকে বোল্ড করেন লকি ফার্গুসন। বেশি স্বস্তিতে ছিলেন ম্যাক্সিই। এ বারের আইপিলে ধারাবাহিক পারফর্ম করতে পারছিলেন না যশস্বী। এলিমিনেটরে নির্ভরতা দিচ্ছিলেন যশস্বী। স্কুপ শট খেলতে গিয়ে খেই হারান। বোলার ক্যামেরন গ্রিনের পাশাপাশি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন কিপার কার্তিকও। অন ফিল্ড আম্পায়ার আউট না দেওয়ায় রিভিউ নেন। সাফল্যও আসে। ৩০ বলে ৪৫ রানে ফেরেন যশস্বী।
আরসিবি শিবিরে বড় সাফল্য দেন করণ শর্মা। রাজস্থান অধিনায়ক যেন উইকেটটা ছুড়ে দিয়ে আসেন। স্টেপ আউট করেন সঞ্জু। অনেকটাই বাইরে বল। লাইন মিস করেন। বল কালেক্ট করে স্টাম্পিংয়ে কোনও ভুল করেননি দীনেশ কার্তিক। রিয়ান পরাগ, ধ্রুব জুরেল ক্রিজে থাকলেও চাপ বাড়তে থাকে রাজস্থান রয়্যালস শিবিরে। এই পিচে বড় শট খেলা সহজ ছিল না। তার উপর প্রয়োজনীয় রান এবং বলের সঙ্গেও দূরত্ব বাড়তে থাকে। আর এর মাঝেই বিরাট কোহলির দৌড়, পিক আপ এবং দুর্দান্ত একটা থ্রো। ক্যামেরন গ্রিন বল ধরে উইকেট ভেঙে দেন। রান আউট ধ্রুব জুরেল। তখনও রাজস্থানের প্রয়োজন ৪১ বলে ৬১ রান।
রাজস্থানের এ মরসুমে চিন্তা ছিল লোয়ার অর্ডার। ৪ উইকেট পড়ায় ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে নামানো হয় শিমরন হেটমায়ারকে। ৭ ইনিংসে মাত্র ৪৫ ডেলিভারি খেলেছিলেন। রিয়ান পরাগের সঙ্গে দায়িত্ব পড়ে সেই হেটমায়ারের উপরই। শেষ ২৪ বলে রাজস্থানের টার্গেট দাঁড়ায় ৩০ রান। রাজস্থানকে চেন্নাইয়ের টিকিট দেওয়ার মরিয়া চেষ্টায় দেখা যায় রিয়ান পরাগকে। হেটমায়ারও ফোর্থ গিয়ারে ব্যাট করছিলেন। ১৭তম ওভারে ১১ রান আসে। শেষ ১৮ বলে ১৯ রান, বড় কোনও টার্গেট বলা যায় না। আরসিবির প্রয়োজন ছিল মিরাকল।
বড় ম্যাচের চাপ সামলানো সহজ নয়। বল আর রান প্রায় সমান। কিন্তু স্নায়ুর চাপ ধরে রাখাটাই আসল। বোলিং-ব্যাটিং দু-ক্ষেত্রেই তাই। ১৮তম ওভারের দ্বিতীয় ডেলিভারিতে রিয়ান পরাগকে বোল্ড করেন সিরাজ। ফের একবার ম্যাচে ফেরে আরসিবি। ওভারের শেষ বলে হেটমায়ারের উইকেট। অনবদ্য ক্যাচ ডুপ্লেসির। স্নায়ুর চাপ এবং মিরাকল। যে ভাবে বর্ণনা করা যায়।
শেষ ২ ওভারে ১৩ রান। রোভম্যান পাওয়েল-অশ্বিন জুটির হাতেই ছিল রাজস্থানের ভাগ্য। ১৯ ওভারে লকি ফার্গুসনকে বাউন্ডারি মেরে স্বাগত জানান পাওয়েল। পরের বলেও বাউন্ডারি। ১০ বলে ৫ রান! আরসিবির স্বপ্ন ভাঙার পথে। ওভারের শেষ বলে ৬ মেরে ম্যাচ ফিনিশ করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েল। আরসিবির বিদায়ে বিরাট বিষণ্ণতা ঘিরে ঘরেছে বেঙ্গালুরুকে।