‘অবকি বার চারশো পার’। লোকসভা ভোটের বাজারে বিজেপির স্লোগান ক্রমশ আকাশ ছুঁয়ে ফেলছে। নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নপূরণ হবে কিনা, তা নিয়ে আলোচনারও শেষ নেই। ভোট-জোটের ময়দানে এ সব তো থাকবেই। কিন্তু ‘ইসবার কেকেআর’ স্লোগান কি কখনও শুনেছি? মনে তো পড়ছে না। আইপিএলের সূচি ঘোষণার আগে টিম মিটিংটা মনে আছে? দিল্লির মধ্য চল্লিশের এক প্রাক্তন ক্রিকেটার স্বপ্নের চারাগাছ পুঁতেছিলেন। মাস তিনেক আগে বলেছিলেন, ‘চেন্নাই যেতে হবে।’ সে দিনই হয়তো লেখা হয়ে গিয়েছিল, ইসবার কেকেআর…!
লোকসভা ভোটের শেষ দফা এখনও বাকি। বাংলায় তৃণমূল, বিজেপি তর্জা তুঙ্গে। শীতঘুম ভেঙে নাকি ফিরছে বামও। লোকসভা ভোটের এই অনুষঙ্গে ঢুকে পড়েছে রেমাল আতঙ্ক। গতি বাড়াচ্ছে, ভয় দেখাচ্ছে। রবি-রাতে ‘বালি’র ঝড় নিয়ে যখন আশঙ্কায় বাংলা, তখন হাজার দুয়েক মাইল দূরে সমুদ্র উপকুলে আর এক ঝড়ে খড়কুটোর মতো উড়ে গেল হায়দরাবাদ। সূর্য ওঠার পালা বলেছিল যারা, তারা চেন্নাইয়ে স্রেফ আঁধারে ডুবে গেল। প্রতিপক্ষ যদি আগ্রাসী হয়, প্রতিপক্ষ যদি দুমড়ে-মুচড়ে দেয়, কিছু করার থাকে কি? এমন বিধ্বংসী নাইট এর আগে দেখেছে আইপিএল?
আধুনিক ক্রিকেটে কোচ কতটা গুরুত্বপূর্ণ? ডাগআউটে যিনি সীমাবদ্ধ, তিনি কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন মাঠের খেলা? আলোচনা বারবার ঘুরে যায় মহেন্দ্র সিং ধোনি, রোহিত শর্মাদের দিকে। এঁরা যত না ক্যাপ্টেন, তার থেকে অনেক বেশি মেন্টর। টিমকে টানতে পারেন, খেলা ফেরাতে পারেন, তরুণদের তুলে ধরতে পারেন, স্বপ্ন দেখাতে পারেন, স্বপ্ন মুঠোয় ধরতে পারেন। পাঁচ বার ট্রফি জেতা দুই ক্যাপ্টেনকে নিয়ে চর্চা আছে, থাকবেও। তিন বার ট্রফি জেতা ক্যাপ্টেনকে নিয়ে? ঠিকই শুনেছেন, তিনিই কেকেআরের ক্যাপ্টেন। ২০১০ ও ২০১২ সালের মতো এ বারও। মেন্টর কী করতে পারেন, দেখিয়ে দিলেন গৌতম গম্ভীর।
এই কেকেআর নতুন নয়। নারিন, রাসেল, ভেঙ্কটেশ-শ্রেয়স আইয়াররা আগের মতো এ বারও আছেন। বরুণ চক্রবর্তী, হর্ষিত রানারাও। ফিল সল্ট, মিচেল স্টার্ক, রমনদীপ সিং, অঙ্গকৃষ রঘুবংশীরা শুধু নতুন মুখ। কার্যত পুরনো একটা টিমকে পোডিয়ামে দাঁড় করানো কতটা কঠিন, মেন্টরই জানেন। গম্ভীর এই কঠিন কাজটা অবলীলায় করে গেলেন। শুরু থেকে শেষ— কেকেআরের গ্রাফ যেন শেয়ার মার্কেটের সূচকের মতো নতুন নতুন রেকর্ড গড়ার জন্যই আইপিএলে নেমেছিল। ফাইনালেও হায়দরাবাদ পাত্তা পেল না গম্ভীর আগ্রাসনের সামনে।
মাত্র ১১৩ রানে শেষ প্যাট কামিন্সের টিম। আইপিএল ফাইনালের সর্বনিম্ন স্কোর। অথচ এই সানরাইজার্সই আইপিএলের ইতিহাসের সর্বাধিক স্কোরের রেকর্ড গড়েছে এ বার। চেন্নাই লাল-মাটি শক্ত ঘাঁটি হবে কিনা, কথা হচ্ছিল। হায়দরাবাদ টিকতেই পারল না কেকেআর বোলিংয়ের সামনে। ২৫ কোটির স্টার্ক থেকে শুরু করে অভিজ্ঞ আন্দ্রে রাসেল, তরুণ হর্ষিত রানা, বৈভব অরোরা, সুনীল নারিন, বরুণ চক্রবর্তী— উইকেটের খাতায় সবাই নাম লিখিয়ে গেলেন। কামিন্সের ২৪টা বাদ দিলে ১০০ও পার হত না হায়দরাবাদের। ট্রাভিস হেড, অভিষেক শর্মা, অনরিখ ক্লাসেন সবাই ব্যর্থ। আসলে কারও ব্যর্থতার জমিতেই জন্ম নেয় কারও সাফল্যের কাহিনি। কেকেআরের মতো।
নারিন ঝড় তোলার আগেই থামলেন। রহমনউল্লাহ গুরবাজ, ভেঙ্কটেশ আইয়ার থামলেন না। থামার কথাও ছিল না। ওই যে ‘ইসবার কেকেআর’ স্লোগানটা গোপন মন্ত্রের মতো গম্ভীর দিয়ে রেখেছিলেন যে প্রথম দিনই!