প্রথম বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব। প্রথম বার খেলার সুযোগও। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য় বুঝতেই দিচ্ছে না তারা প্রথম বার বিশ্বকাপ খেলছে! গত দু-ম্যাচেই তাদের পারফরম্যান্স পরিণত মানিসকতার পরিচয় দিয়েছে। কানাডাকে হারানোটা হয়তো প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী দলকে! কাগজে কলমেই শুধু নয়, অতীত সাফল্য়ের দিক থেকেও। ওয়ান ডে এবং টি-টোয়েন্টি দুই ফরম্যাটেই অতীতে বিশ্বকাপও জিতেছে পাকিস্তান। তাদের বিরুদ্ধে চোখ ধাঁধানো পারফর্ম করেছিল আমেরিকা। সুপার ওভারে তাদের হারিয়েছে। সুপার ওভারে দু-দলের পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন সৌরভ নেত্রভালকর। তবে ম্যাচের মূল সময়ে আমেরিকার এক বোলারের পারফরম্যান্সের কথা না বললেই নয়।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টস জিতে রান তাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেই ম্যাচটি হয়েছিল ডালাসে। সেখানকার পিচ একেবারেই নিউ ইয়র্কের মতো নয়। আমেরিকার ভেনুর মধ্যে হাইস্কোরিং ডালাস। সেখানে পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী দলকে মাত্র ১৫৯/৭ স্কোরেই আটকে দেয় আমেরিকা। এর নেপথ্যে রয়েছেন বাঁ হাতি স্পিনার নস্তাস কেনজিগে। তাঁর জন্ম আমেরিকাতে হলেও মাতৃভূমি ভারত। আর আজ ভারতের ব্যাটারদের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারেন এই স্পিনারই।
ডালাসে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে ৪ ওভারে মাত্র ৩০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন নস্তাস কেনজিগে। সহজ অ্যাকশন। টিপিক্যাল বাঁ হাতি স্পিনার। আর সহজ বিষয়টাই সবচেয়ে কঠিন। সালটা ২০১৩। পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার লক্ষ্যে বেঙ্গালুরুতে নস্তাস। সে সময় ২২ বছরের তরুণ। কর্ণাটক ইনস্টিটিউট অব ক্রিকেট, যেখানে মায়াঙ্ক আগরওয়াল, মণীশ পান্ডের মতো ক্রিকেটারদেরও ক্রিকেটের পাঠ হয়েছে। সেই অ্য়াকাডেমিতেই ক্রিকেট শিখছিলেন। বেঙ্গালুরুতে পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকতেন। সঙ্গে ছিল বায়ো টেকনোলজিতে ডিগ্রিও। কিন্তু ক্রিকেটের প্য়াশন কি ভুলে যাওয়া যায়?
মেডিক্যাল সরঞ্জাম পরিদর্শকের চাকরি নেন নস্তাস। কয়েক মাস আগে বেঙ্গালুরুতে এসেছিলেন। সে সময় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে বলেছিলেন, ‘সে সময়টা একটা লক্ষ্যহীন জীবন কাটাচ্ছিলাম। এরপর নিউ ইয়র্কে কলম্বিয়া ক্রিকেট ক্লাবে যোগ দিই। ক্রিকেটেই এগনোর তাগিদটা আবারও নতুন করে জেগে ওঠে।’ বেঙ্গালুরুতে তাঁর ক্রিকেট গুরু ইরফান সেট বলছেন, ‘ওর প্রতিভা নিয়ে কোনও সন্দেহ ছিল না। প্রচুর পরিশ্রম করেছে। স্টেট লিগেও দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে। তবে এখানে যা হয়, হাজার হাজার ক্রিকেটার, সকলেই তো কর্ণাটক রাজ্য টিমে জায়গা করে নিতে পারে না। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, নসও (নস্তাস) পারেনি। তবে ও সঠিক সময়েই আমেরিকা পাড়ি দিয়েছিল।’
মার্কিন মুলুকে পাড়ি দিয়ে লাভই হয়েছিল। তাঁর ক্রিকেট স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমেরিকা জাতীয় দলে খেলছেন, বোর্ডের চুক্তিতে রয়েছেন। মেজর লিগ ক্রিকেটেও খেলছেন। উদ্ধোধনী মেজর লিগ ক্রিকেটে নজরও কেড়েছে। এ বার বিশ্বকাপেও নজর কাড়ছেন বেঙ্গালুরুতে ক্রিকেট শেখা নস্তাস।