সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ক্রিকেট কেরিয়ার রূপকথার চেয়ে কম নয়। বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটার। বিশেষ করে বলতে হয় সাদা বলের ক্রিকেটের কথা। তবে ব্যাটার সৌরভকে যেন কয়েক যোজন ছাপিয়ে গিয়েছিল ক্যাপ্টেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ক্রিকেট বিশ্ব তাঁকে উদাহরণ হিসেবে দেখে। একটা টিমকে কীভাবে অন্ধকার থেকে আলোয় আনতে হয়, ভারতীয় ক্রিকেটে সেটাই করে দেখিয়েছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। কিছু কিছু ঘটনা না ঘটলে বড় কিছু হয় না। সৌরভের জীবনেও নানা টার্নিং পয়েন্ট রয়েছে। তেমনই একটা অধ্যায়কে সৌরভের, বরং আরও পরিষ্কার করে বললে ভারতীয় ক্রিকেটের টার্নিং পয়েন্ট বলা যায়।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বাঁ হাতি ব্যাটার সকলেই জানেন। কিন্তু আদতে তিনি ডান হাত দিয়েই অধিকাংশ কাজ করেন। বোলিংয়েও ডান হাতি। ব্রেকফাস্ট উইথ চ্যাম্পিয়নে এই প্রসঙ্গটা উঠেছিল স্মৃতি মান্ধানাকে নিয়ে। ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটের উজ্জ্বল নক্ষত্র স্মৃতির কাহিনিও সৌরভের মতোই। দাদার কিট দিয়ে খেলা শুরু। সে কারণেই দু-জন বাঁ হাতি হয়েছেন। কিন্তু সৌরভের ক্ষেত্রে আরও অনেক অজানা বিষয় রয়েছে। আচ্ছা, সৌরভ যদি ফুটবলেই মেতে থাকতেন? বিশ্ব ক্রিকেট হয়তো তাঁর মতো ক্যাপ্টেন পেত না। রইল সেই ঘটনা।
স্মৃতি প্রসঙ্গ থেকেই বাঁ হাতি ব্যাটিংয়ের কারণ নিয়ে সৌরভ বলেন, ‘গ্লাভস পরতে হত। কারণ, গ্লাভস আলাদা হত। বাবা শুধু দাদার (স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়) জন্যই কিট কিনত। আমি ওর কিটই ব্যবহার করতাম। আমি মূলত ফুটবল খেলতাম। ক্রিকেটে মনে পড়ে, বাংলার অনূর্ধ্ব ১৫ দলের হয়ে ট্রায়াল ম্যাচ ছিল। সম্ভবত ১৯৮৮-৮৯ সালে। টিমের সাত জনের টায়ফয়েড হয়েছিল। সে সময় কলকাতায় খুব টায়ফয়েড হত। টিমে প্লেয়ার ছিল না। দল নির্বাচন নিয়েও এত কড়াকড়ি ছিল না তখন। আমাকে জিজ্ঞেস করা হল খেলব কিনা। রাজি হয়ে যাই। দাদার ব্যাট, প্যাড, গ্লাভস নিয়েই নেমে পড়ি। আর সেই ম্যাচেই সেঞ্চুরি। বাড়িতে আমার চার দাদা ছিল। তুতো দাদারা মিলে। ওরা ডানহাতি হলেও, ব্যাট করত বাঁ হাতে। সে কারণেই আমারও বাঁ হাতি হওয়া।’
সৌরভের বাড়িতে যে ক্রিকেটের পরিকাঠামো কতটা উন্নত ছিল, অনেকেরই হয়তো জানা। সৌরভ আরও বিস্তারে বলেন, ‘বাড়িতে শুধু বোলিং মেশিনই নয়, বাবা সবরকম ব্যবস্থাই করে দিয়েছিল। জিম, বোলিং মেশিন তো ছিলই। প্র্যাক্টিস পিচ ছিল দুটো। একটি সিমেন্ট ও আর একটি টার্ফ পিচ। ক্রিকেটের সবরকম পরিকাঠামো প্রস্তুত।’ প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে সৌরভের আত্মপ্রকাশেও একটি মজার ঘটনা রয়েছে। আসলে ঘটনাটি নয়, তবে তাঁর প্রতিক্রিয়া মজার বলা যায়। রঞ্জি ট্রফি ফাইনাল দিয়ে প্রথম শ্রেনির ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছিল সৌরভের। তার আগের দিন কী ঘটেছিল, সেটাই জানিয়েছেন সৌরভ।
মহারাজের কথায়, ‘দিনটা এখনও মনে পড়ে। বাড়ি ফিরে বইপত্র টেবিলে রেখেছি। দেখছি সবাই কেমন চুপচাপ। মাকে বললাম, খিদে পেয়েছে, খাবার দাও। ডাইনিং টেবিলে আমি খাবারের অপেক্ষায়। মাকেই জিজ্ঞেস করি, সব ঠিক আছে? সবাই চুপচাপ কেন? মা বলে, সব ঠিক আছে, এমনিই চুপচাপ। তুই কাল খেলছিস। অবাক হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করি, কাল আমি খেলছি? প্রথমে দারুণ খুশি হয়েছি। রঞ্জি ট্রফি খেলার সুযোগ। তাও আবার সরাসরি ফাইনালে। খাওয়া দাওয়া শেষ। অন্য় রুমে যাই। দাদাকে জিজ্ঞেস করি, টিমের বাইরে কে যাচ্ছে? কার জায়গায় খেলব আমি? দাদা বলে-আমার জায়গায়। সেই মুহূর্তে হাসিটা উধাও হয়ে গেল।’ শেষের কথাগুলি বলার সময় সৌরভের অভিব্যক্তি ছিল দেখার মতো।