‘কোচ স্যার বাথরুমে চলে গেল…’, সোনমের হাত চাইতে গিয়ে সুনীল ছেত্রীর কী অবস্থা হয়েছিল!


চলো কুছ তুফানি করতে হ্যায়…। এ যেন বিজ্ঞাপনের সেই ক্যাচ লাইন। ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি সুনীল ছেত্রীর জীবনেও এমন মুহূর্ত এসেছিল। খেলার মাঠের ডাকাবুকে, সকলের ভালোবাসার পাত্র, ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি। সুনীল ছেত্রীর জন্য অনেক অনেক বিশেষণ যোগ করা যায়। কিন্তু সুনীল ছেত্রীও যে নার্ভাস হন! তবে সেটা খেলার মাঠে নয়। ডেয়ারিং মোডে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন নিজেই। আসলে যাঁর মেয়ের হাত চাইতে যাচ্ছেন, তাঁর নামটা যে সুব্রত ভট্টাচার্য! ভারতীয় ফুটবল, কলকাতা ময়দান যাঁকে চেনে বাবলু দা নামেই। এই মানুষটার সামনে গেলে যে কারও পরস্থিতিই সঙ্গীন হতে পারে। দেশের অন্যতম সফল ফুটবল কোচের কাছে তাঁর মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব! কী পরিস্থিতি হয়েছিল সুনীল ছেত্রীর?

ইউটিউবে একটি অনুষ্ঠানে নানা বিষয়েই কথা বলেছেন আন্তর্জাতিক ফুটবলে সদ্য প্রাক্তন সুনীল ছেত্রী। তাঁর মুখেই জেনে নেওয়া যাক সেই ঘটনাগুলি। কিশোর বয়সের প্রেম। তাও আবার কোচের মেয়ের সঙ্গে! এ বার বিয়ের প্রস্তাবের পালা। সুনীল বলেন, ‘অনেক সাহস নিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দিতে যাই। ভেতরে কী চলছিল, বোঝাতে পারব না। আসলে, সোনমই জানিয়েছিল বাড়িতে ওর বিয়ে নিয়ে কথা চলছে। ওকে বলি, আর রাস্তা নেই, আমি আসছি, সরাসরি কথা বলব, যা হবে দেখা যাবে। সোনম আমাকে একটু খোঁচাই দিল, এমন তো অনেক বলেছো। যাই হোক, সকাল ৫টার ফ্লাইট ধরলাম। সে সময় আমি বেঙ্গালুরুতে ছিলাম। কলকাতা গেলাম। ওদের বাড়িতে। আসলে সাহেব (সোনমের ভাই) আর আমি ভালো বন্ধু ছিলাম। কোচের কাছে সাধারণত ট্র্যাকশুট এসব পরেই যেতাম। স্বাভাবিক ভাবেই আমাকে ফর্মাল পোশাকে দেখে একটু ঘাবরে গিয়েছিলেন।’

এরপরই প্রশ্নের ফুলঝুরি। সুনীলের কথায়, ‘আমি তাঁকে শুধু বলেছি, আপনার সঙ্গে কথা বলতে এসেছি। আমাকে পাল্টা প্রশ্ন-এত সকাল সকাল কোথা থেকে, এই ম্যাচ, সেই ম্যাচ নিয়ে নানা কথা। সাধারণত যে ভাবে কথা হত, ওই ম্যাচে ডিফেন্সে এই ছিল, আমার কী করা উচিত ছিল। এখনও যখন কথা হয়, পারিবারিক কথা কম, খেলা নিয়েই যাবতীয় আলোচনা। এরকমই কথা চলছিল। আমার কাছে প্রায় ২০টা লাইন রেডি ছিল।’

আপনি কি লিখে নিয়ে গিয়েছিলেন? সঞ্চালকের প্রশ্নে সুনীল যোগ করলেন, ‘লিখিনি, তবে কী কী বলব, মুখস্থ করে গিয়েছিলাম। জীবনে যত বড় কিংবা সফলই হই না কেন, বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছি। এমন অভিজ্ঞতা তো ছিল না। প্রচণ্ড নার্ভাস মুহূর্ত। সাধারণত, এমন ক্ষেত্রে দুই পরিবারই আগে কথা বলে। কিন্তু আমার কী হয়েছিল জানি না, নিজেই চলে গিয়েছিলাম। তার আগে মা-বাবাকে ফোন করে বলি, আমি এটা করতে যাচ্ছি। বলে-তথাস্তু, আমাদের আশীর্বাদ রইল, আমরা গেলে কি ভালো হয়? বলি, না ঠিক আছে, আমি আগে যাই।’

এরপর? ‘কোচ স্যার নানা ম্যাচ নিয়েই কথা বলে যাচ্ছিলেন। আমি শুধু একটা গ্যাপ খুঁজছিলাম, কখন উনি একটু থামবেন, আমি সোনমের কথা বলতে পারব। যাই হোক, সাহেব, স্যার বসে, আমি এক কোনায়। এরকম কথা বলতে বলতে, কোচ স্যার হঠাৎ বললেন-সাহেব, ওকে শর্টস (হাফপ্যান্ট) দাও, সকাল সকাল কী পরে আছে, ওর হয়তো অস্বস্তি হচ্ছে। এই যে থামলেন, ব্যস। সাধারণত কোচের সঙ্গে আমি বাংলাতেই কথা বলি। মানে কথা উনি বলেন, আমি শুধু জবাব দিই। কিন্তু ওদিন, মুখস্থ করে গিয়েছিলাম। ইংরেজিতেই বলি- কোচ, আই ওয়ান্ট টু টক টু ইউ অ্যাবাউট সোনম।’

সেদিনের পরিস্থিতি ভেবে সুনীলের নার্ভাসনেস যেন এখনও রয়ে গিয়েছে। সেভাবেই যোগ করেন, ‘এরপর বলি, আই নো হার ফর থার্টিন ইয়ার্স, অ্যান্ড আই রিয়েলি লাভ হার। সোনম আমাকে আগে থেকে একটা অনুরোধ করেছিল, যেন কোনভাবেই না বলি আমরা পরস্পরকে ১৩ বছর ধরে চিনি। আর আমি দ্বিতীয় লাইনেই সেটা বলে ফেলেছি। তৃতীয় লাইন ছিল, আপনার আশীর্বাদ চাই…। যদিও এই লাইনটা কমপ্লিট হওয়ার আগেই উনি উঠে দাঁড়ালেন। একটা শব্দও না বলে বাথরুমে চলে গেলেন। দরজা বন্ধ। আমি আর সাহেব একে-অপরকে দেখছি। অপেক্ষা করছি কখন বেরোবেন, কী বলবেন।’

এরপরের অভিজ্ঞতা কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে ফেলেছিল সুনীল ছেত্রীকে। বলছেন, ‘উনি যখন বেরোলেন, আমার এত খারাপ লাগছিল যে আমার চোখে তাকিয়ে কথা বলছিলেন না। অন্য দিকে তাকিয়েই বলে গেলেন, আচ্ছা ঠিক আছে, আমি তোকে ছোট থেকে চিনি-জানি। লতার (সুব্রত ভট্টাচার্যর স্ত্রী) সঙ্গে কথা বলব, তোমার পরিবারের সঙ্গেও কথা বলতে হবে। সব হয়ে যাবে। কিন্তু আমার একটা বিষয়ই খারাপ লাগছিল যে আমি আমার কোচকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলেছি উনি আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলছেন না।’

ঘর থেকে বেরিয়েই সোনমের বকা খেয়েছিলেন সুনীল। বলছেন, ‘বেরিয়ে দেখি মা ও সোনম দাঁড়িয়ে। ভেতরে কী হল, সোনমকে বললাম। ও শুনেই বকল, একটা কথাই বলতে মানা করেছিলাম যে, আমরা ১৩ বছর ধরে চিনি এটা বোলো না, সেটাই বলে দিলে!’ তারপর আর কী। সব ঠিক ঠাক। আমাদের বিয়ে হল। এখন আমাদের সন্তানও রয়েছে। হ্যাপি লাইফ।

Leave a Reply