টিম ইন্ডিয়ার শাশুড়ি-বৌমা! সচিন-সেওয়াগের মুখে যে জুটির কথা…


যদি বলা হয় টিম ইন্ডিয়ার স্বপ্নের ওপেনিং জুটি কী ছিল? শতাব্দীর শুরুর দিকের কথা। যাঁরা ‘নাইন্টিস কিড’, তাঁরা একটু হলেও সমস্যায় পড়বেন। সচিন তেন্ডুলকর-সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ওপেনিং জুটি না সচিন-সেওয়াগ ওপেনিং জুটি! দুটোর মধ্যে সেরা বেছে নেওয়া খুবই কঠিন। একটা সময় ভারতীয় টিমের কনসেপ্টই যেন ছিল, সচিন তাড়াতাড়ি আউট হলে সৌরভ সামলে দেবেন। আবার সৌরভ তাড়াতাড়ি আউট হলে! সচিন তেন্ডুলকর সামলে দেবেন। পরিস্থিতি একই ছিল সচিন-সেওয়াগ জুটির সময়ও। এই দুই জুটি ক্রিজে নামা মানেই ছিল প্রতিপক্ষ বোলারদের ঘুম উড়ে যাওয়া। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওপেনারদের ফেরানোই প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল। এতেও অবশ্য খুব একটা লাভ হয়নি। আরও একটা ওপেনিং জুটিও ভুললে চলবে না। সচিন, সেওয়াগ, সৌরভকে নিচের দিকেও ব্যাট করতে হয়েছে। সৌরভ-সেওয়াগ জুটিও ওপেনিং করেছেন।

ন্যাটওয়েস্ট সিরিজই ধরা যাক। ভারতীয় ক্রিকেটে এক ঐতিহাসিক সফর। ২০০২ সালে ন্যাটওয়েস্ট ট্রফি ফাইনালে ক্যাপ্টেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে ওপেন করেছিলেন বীরেন্দ্র সেওয়াগই। সচিন ব্যাট করেছিলেন চারে। টেস্ট হোক বা ওডিআই। প্রথম বল থেকেই বিধ্বংসী মেজাজে ব্যাট করতেন বীরেন্দ্র সেওয়াগ। সচিন তখন অ্যাঙ্করের ভূমিকায়। কোনও ম্যাচে দু-জনেই বিধ্বংসী ভূমিকায়। সচিন-সৌরভের ক্ষেত্রেও তাই ছিল। ভারতের ওপেনিং জুটি বদলেছে। টেস্টে অবশ্য সেওয়াগ ওপেন করলেও তাঁর সঙ্গী বদলাত। জন রাইটের সময় ওডিআইতে সচিন-সেওয়াগ জুটি সাময়িক ছিন্ন হয়েছিল। ২০০২ থেকে মূলত সচিন-সেওয়াগ ওপেনিং জুটি শুরু হয়। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে। এরপর সাময়িক বিচ্ছেদ। ২০০৩ বিশ্বকাপে ফের দেখা যায় সচিন-সেওয়াগ জুটি। মাঝে সচিন-সৌরভ কিংবা সৌরভ-সেওয়াগ। এই বিচ্ছেদ কেন হয়েছিল, তা নিয়েই মজার গল্প সচিন-সেওয়াগের মুখে।

বছর দুয়েক আগে বিক্রম সাতায়ের একটি শো-তে এসেছিলেন সচিন-সেওয়াগ। সেখানেই এই ‘বিচ্ছেদের’ ঘটনা তুলে ধরেন সচিন ও সেওয়াগ। সচিন বলেন, ‘আসলে আমরা নিউজিল্যান্ড সিরিজে ভালো পারফর্ম করতে পারিনি। বিশেষ করে আমি। তিন ম্যাচের মধ্যে ০, ০, ১। স্ত্রী অঞ্জলী মজা করে বলেছিলেন আচ্ছা-এটা কোথাকার এসটিডি কোড! এরপর আমরা ২০০৩ ওয়ান ডে বিশ্বকাপ খেলতে সাউথ আফ্রিকা যাই। সেখানে বিশ্বকাপের প্র্যাক্টিস ম্যাচেও আমি চারে ব্যাট করেছি। প্র্যাক্টিস ম্যাচে আমরা হেরেছিলাম। কোচ জন রাইট প্যানিক করেছিলেন। ম্যাচের পর কোচ আমার ঘরে আসে। জিজ্ঞেস করে আমি কোথায় ব্যাট করতে চাই।’

এই খবরটিও পড়ুন

এরপরের ঘটনাও সচিনই শোনান, ‘কোচকে বলেছিলাম, টিম যেখানে ব্যাট করতে বলবে, সেখানেই করব। জন আরও জোর দিয়ে প্রশ্ন করে, আমি কত নম্বরে ব্যাট করতে চাই। তখন বলি, যদি ব্যক্তিগত মত জানতে চান, তা হলে বলব- আমার ওপেনিং করা উচিত।’ ২০০৩ সালের ওয়ান ডে বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে খেলে ভারত। ওপেন করেছিলেন সৌরভ-সচিন। সেওয়াগ তিনে। ম্যাচটি জিতেছিল ভারত। দ্বিতীয় ম্যাচ ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচেও একই ওপেনিং কম্বিনেশন। অজিদের বিরুদ্ধে ১২৫ রানে অলআউট ভারত। ৯ উইকেটে জেতে অজিরা।

সেওয়াগ যোগ করেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারের পর দেশে প্রচুর হতাশা ছিল। আমাদের কুশপুতুলও জ্বালানো হয়। এরপর আমাদের ম্যাচ ছিল জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে। ম্যাচের আগে জন রাইট মিটিং ডাকেন। পুরো টিমকে বলেন-সবাই কোন ওপেনিং জুটি চাও সেটা কাগজে লিখে দাও।’ যে জুটিকে নিয়ে বেশি ভোট পড়বে, সেটাই হবে আর কী! সেওয়াগের কথায়, ‘টিমের বেশির ভাগই সচিন-সেওয়াগ ওপেনিং জুটি লিখেছিল। একটাতেই দাদার নাম ছিল।’ হেসে সেওয়াগ বলেন, ‘বুঝতে পেরেছিলাম ওটা দাদাই লিখেছিল। জিম্বাবোয়ে ম্যাচ থেকে সচিন-সেওয়াগ ওপেনিং জুটি ফের শুরু হয়।’

এরপরই বিচ্ছেদের প্রসঙ্গে সঞ্চালককে সেওয়াগ বলেন, ‘আপনি জিজ্ঞেস করলেন না, যে সচিন-সেওয়াগ জুটি কেন আলাদা হয়েছিল, তো আমাদের টিমে যে শাশুড়ি-বৌমা জুটি ছিল তাদের জন্যই। (হেসে বলেন) মানে দাদা-জন রাইট জুটিরই ষড়যন্ত্র ছিল আমাদের আলাদা করার। তবে দ্রুতই আমাদের জুটি নিয়ে ওরা সন্তুষ্ট হয় এবং সচিন-সেওয়াগ জুটি চলতে থাকে।’

Leave a Reply