আটে নেমে সেঞ্চুরি নীতীশ কুমার রেড্ডির, মেলবোর্নে চূড়ান্ত নাটক


ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন তারার জন্ম…! এমনটা বলাই যায়। আটে নেমে সেঞ্চুরি! অস্ট্রেলিয়া শিবিরে চূড়ান্ত হতাশার পরিস্থিতি তৈরি করলেন নীতীশ কুমার রেড্ডি। প্রথম টেস্ট সিরিজ, প্রথম অস্ট্রেলিয়া সফর। ভারত এ দলের হয়ে পারফর্ম করতে পারেননি। টিম ম্যানেজমেন্ট ভরসা দেখিয়েছিল। পারথেই টেস্ট অভিষেক। ছোট্ট অথচ কার্যকরী ইনিংস খেলে এসেছেন। তেমনই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ব্রেক থ্রু দিয়েছেন। মেলবোর্ন টেস্টে খাদের কিনারায় থাকা ভারতীয় দলকে অনেকটাই টেনে তুললেন। বক্সিং ডে টেস্টে সকলের মুখে শুধু এখন একটাই নাম, নীতীশ কুমার রেড্ডি।

বক্সিং ডে টেস্টের তৃতীয় দিন প্রথম সেশনেই ২ উইকেট হারায় ভারত। শুরুর দিকে দুর্দান্ত ব্যাটিং করছিলেন ঋষভ পন্থ ও রবীন্দ্র জাডেজা। কিন্তু ঋষভ পন্থ অপ্রয়োজনীয় শটে উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসেন। ক্রিজে প্রবেশ নীতীশ কুমার রেড্ডির। অফস্পিনার নাথান লিয়ঁ ফেরান রবীন্দ্র জাডেজাকে। ফলোঅনের আতঙ্ক ছিল ভারতীয় শিবিরে। ওয়াশিংটন সুন্দরের সঙ্গে ধীরে ধীরে পার্টনারশিপ গড়েন। ওয়াশিংটন গত অস্ট্রেলিয়া সফরেও ছিলেন। একদিক থেকে ইনিংস অ্যাঙ্কর করেন। উল্টোদিকে, পরিণত মানসিকতার ব্যাটিং তরুণ অলরাউন্ডারের।

কেরিয়ারের প্রথম টেস্ট সিরিজ। মেলবোর্নে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেই পুষ্পা সেলিব্রেশনে অজিদের বার্তা দিয়েছিলেন, আউট হওয়ার আগে ‘ঝুঁকবেন’ না। অনেক সময়ই তরুণ ক্রিকেটারদের মধ্যে দেখা যায়, ব্যক্তিগত একটা মাইলস্টোন ছুঁয়ে ফেললেই আত্মতুষ্টি ভর করে। নীতীশ উল্টো ধাঁচের। ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় মন দেন। ৮৫ রানে পৌঁছতেই সেঞ্চুরির প্রত্যাশা শুরু। কিন্তু হঠাৎই মন্দ আলোয় খেলা থামাতে হয়। বৃষ্টিও নামে। অস্বস্তি বাড়তে থাকে। দীর্ঘ বিরতির পর খেলা শুরু হতেই রি-ফোকাস।

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতীয়দের মধ্যে আট নম্বরে নেমে সর্বাধিক স্কোরের রেকর্ড ছিল অনিল কুম্বলের। ৮৭ রান করেছিলেন ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক তথা কোচ। নীতীশ তাঁকে ছাপিয়ে যান চা বিরতির পরই। ওয়াশিংটন আউট হতেই ফের চাপ বাড়ে। সে সময় ৯৭ রানে নীতীশ। সঙ্গীর অভাব হবে না তো! ক্রিজে যোগ দেন বুমরা। দুর্দান্ত একটি কভার ড্রাইভ মারলেও সিঙ্গল নেননি। তিনটি সিঙ্গল মানা করে দেন। স্কট বোল্যান্ডের ওভারের শেষ ডেলিভারিতে বড় শট খেলেছিলেন। যদিও বল হাওয়ায়। নো ম্যান্স ল্যান্ডে। ২ রান নেন। স্ট্রাইকও হারান। ৯৯ রানে অপেক্ষায় নীতীশ। দায়িত্ব পড়ে বুমরার কাঁধে। আর যাই হোক আউট হওয়া যাবে না।

বুমরাকে স্ট্রাইকে দেখেই আক্রমণে আসেন ক্যাপ্টেন প্যাট কামিন্স। তৃতীয় ডেলিভারিতেই আউট জসপ্রীত বুমরা। ক্রিজে প্রবেশ সিরাজের। লাস্ট উইকেট। তিনটি ডেলিভারি অন্তত সামলাতে হবে। দুটো ডেলিভারি সামলে দিতেই টেনশনের মুহূর্ত। শেষ ডেলিভারিও সামলে দেন সিরাজ। শুধু এমসিজির গ্যালারিই নয়, কোটি কোটি ক্রিকেট প্রেমীর স্বস্তি। নীতীশ স্ট্রাইকে আসেন। আলো কমে আসায় আরও চিন্তা বাড়ছিল। বোলিংয়ে পেসার। প্রত্যেকটা ডেলিভারির সঙ্গে টেনশন বাড়ছে। অবশেষে মিড অন ফিল্ডারের উপর দিয়ে বাউন্ডারি মেরে সেঞ্চুরি পূর্ণ নীতীশের। গ্যালারিতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর বাবা।

Leave a Reply