স্টাফ রিপোর্টার : সন্তোষ ট্রফিতে শেষবারের মতো বাংলার সাফল্য ২০১৬-’১৭—তে। তারপর থেকে শুধুই শূন্যতা। যে রাজ্য ৩২ বারের জন্য জাতীয় ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন, গত কয়েক বছর ধরে সেই বাংলা সন্তোষ থেকে ফিরেছে শূন্য হাতে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ জায়গায় পৌঁছেছে যে, গত মরশুমে বাংলাকে বিদায় নিতে হয়েছে, একেবারে প্রাথমিক রাউন্ড থেকেই। যা ভারতীয় ফুটবলে বাংলাকে খাদের কিনারায় এনে দাঁড় করিয়েছে। যে কারণে, সঞ্জয় সেনের কোচিংয়ে বাংলার ফের সন্তোষ জয়ের সম্ভাবনা তৈরি হতেই, কোচ-ফুটবলারদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও।
ফাইনালের সময় মাঠের বাইরে থেকে দলকে সমর্থন জানানোর জন্য সকালের বিমানেই হায়দরাবাদ চলে যাচ্ছেন আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্ত। আর এদিন কোচ সঞ্জয় সেনকে চূড়ান্ত যুদ্ধে নামার আগে ফোন করে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি জানিয়ে দেন, চ্যাম্পিয়ন হয়ে দল ফিরলে তিনি নিজে বিমানবন্দরে যাবেন বাংলা দলকে স্বাগত জানানোর জন্য।
বাসুদেব মান্ডি ছাড়া দলের সবাই মঙ্গলবার রাতে ফাইনাল খেলার জন্য তৈরি। গ্রুপ লিগে সেই যে চোট পেয়েছিলেন, তারপর থেকে আর খেলার জায়গায় নেই তিনি। তবে সেমিফাইনালে যাঁরা খেলেছেন, তাঁরাই ফাইনালে খেলার মতো জায়গায় রয়েছেন, ফাইনালের আগে এটাই যা ভাল দিক।
গ্রুপ লিগের ম্যাচে টানা কৃত্রিম ঘাসের মাঠে খেলার পর সেমিফাইনালে খেলতে হয় হায়দরাবাদের গাচ্চিবোলির ঘাসের মাঠে। তা-ও প্রতিপক্ষ ছিল এমন একটা দল, যারা গত বারের সন্তোষ ট্রফি চ্যাম্পিয়ন, সার্ভিসেস। শুরুতে বড় ঘাসের জন্য একটু সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। শেষে অবশ্য সার্ভিসেসকে চার গোল দিয়েছে বাংলা! ফাইনালে তাই ঘাসের মাঠ বলে খুব একটা সমস্যার মুখে বাংলা পড়বে না বলেই ধারণা বাংলার কোচ সঞ্জয় সেনের। বলছিলেন, ‘‘দলের প্রত্যেকে ভাল শেপে রয়েছে। এটাই আমাদের দলের জন্য ভাল দিক।’’
১১ গোল করে রবি হাঁসদা শুধু দলেরই সর্বোচ্চ গোলদাতাই নন, হাবিবের একটা সন্তোষ ট্রফিতে ১১ গোলের রেকর্ডও ছুঁয়ে ফেলেছেন। এরকম নয় যে শুধু রবি হাঁসদাই গোল করছেন। নরহরি শ্রেষ্ঠা–তাঁরও গোল সংখ্যা ৭। কিন্তু প্রতিপক্ষ দলের নাম যেহেতু কেরল, তাই প্রতিপক্ষ দলকে যথেষ্ট সমীহ করছেন সঞ্জয় সেন। তার মধ্যে প্রতিপক্ষ দলের এমন পাঁচজন ফুটবলার রয়েছেন, যাঁরা এই মরশুমে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে কলকাতা লিগে খেলেছেন। তাতে অবশ্য সমীহ করলেও ভয় পাওয়ার কোনও কারণ দেখছেন না তিনি। বললেন, ‘‘ইস্টবেঙ্গলের হয়ে কলকাতা লিগে খেলেছে মানেই আমাদের ভয় পেতে হবে এরকম নয়। কেরলের প্রতিটি পজিশনে ভাল ফুটবলার রয়েছে। তাই সমীহ করছি। কিন্তু আমাদের দলও তৈরি আছে। আর চাপে থাকার কোনও অর্থই হয় না। ফুটবলাররা প্রতিটি ম্যাচ ভাল খেলে এসেছে। ফাইনালেও খেলবে। এই ফাইনাল পর্যন্ত আসার যাবতীয় কৃতিত্বই ওদের।”
এদিন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, আইএফএ চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত সহ আইএফএর পদাধিকারীদের মিটিংয়ে ডাকেন। সেখান থেকেই ফোন করেন বাংলার কোচ সঞ্জয় সেনকে। প্র্যাকটিসে থাকার জন্য শুরুতে সঞ্জয় সেনকে ফোনে পাওয়া সম্ভব হয়নি। পরে প্র্যাকটিস থেকে ফিরে নিজেই ক্রীড়ামন্ত্রীকে ফোন করেন সঞ্জয় সেন। ক্রীড়ামন্ত্রী বাংলার কোচকে উদ্বুদ্ধ করে বলেন, যেভাবেই হোক বাংলাকে চ্যাম্পিয়ন করেই ফিরতে হবে। ফুটবলাররা যেভাবে খেলছে, তিনি আশাবাদী বাংলা চ্যাম্পিয়ন হয়েই ফিরবে। তিনি নিজে বিমানবন্দরে যাবেন পুরো দলকে স্বাগত জানানোর জন্য। একই সঙ্গে তিনি জানান, সঞ্জয় সেন এই মুহূর্তে বাংলার সেরা কোচ। তাঁর বড় দলের কোচিংয়েও এবার সুযোগ পাওয়া উচিত। ক্রীড়ামন্ত্রীর কথায় বাংলার কোচ ফোনের অপর প্রান্ত থেকে জানান, তিনি এবং তাঁর ফুটবলাররা ফাইনালে একশো ভাগ দিয়ে বাংলাকে চ্যাম্পিয়ন করার চেষ্টা করবেন। বাংলার অধিনায়ক চাকু মাণ্ডির সঙ্গেও কথা বলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবরকম ভাবে বাংলা দলের পাশে আছেন।