মিলবে না বিজেপি সরকারের সাহায্য, ‘বিলুপ্ত’ হওয়ার পথে ওড়িশা এফসি!


দুলাল দে: ওড়িশা সরকার আর পৃষ্ঠপোষকতা করবে না। ফলে সামনের মরশুম থেকে ইন্ডিয়ান সুপার লিগে ওড়িশা থেকে কোনও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্লাব থাকবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ তৈরি হয়েছে। স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি ওড়িশা এফসি ফের দিল্লি ফিরে যাবে তাদের পুরনো নাম, ‘দিল্লি ডায়নামোস ফুটবল ক্লাব’ হিসেবেই? না কি, অন্য কোনও রাজ্য থেকে ফের নাম বদলে নতুন নাম নিয়ে আইএসএলে খেলতে দেখা যাবে তাদের?

২০১৪-তে দিল্লি ডায়নামোস ফুটবল ক্লাব নাম নিয়ে আইএসএলে যাত্রা শুরু। কিন্তু চার বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও দেখা যায়, দিল্লির বুকে আশানুরূপ সমর্থক তৈরি হচ্ছে না। এমনকী দলকে সমর্থন করার জন্য মাঠে লোকও আসছে না। স্বাভাবিক ভাবেই এই অবস্থায় দিল্লি ডায়নামোসের জন্য স্পনসরশিপ পেতেও সমস্যা হচ্ছিল ক্লাব কর্তাদের। তখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, দলকে বাঁচাতে গেলে ভেনু পরিবর্তন করতে হবে। সেই সময় ওড়িশায় নবীন পট্টনায়েকের সরকার। তারাও চাইছিল, তাদের রাজ্য থেকে কোনও দলকে আইএসএলে খেলাতে। একদিকে দিল্লি ডায়নামোস চাইছিল, রাজ্য বদল করতে। অন্যদিকে নবীন পট্টনায়েকের সরকার চাইছিল, নিজেদের রাজ্য থেকে কোনও দলকে আইএসএলে খেলাতে। ফলে ২০১৯ থেকে দিল্লি ডায়নামোস নাম বদলে ওড়িশা এফসি হয়ে খেলতে শুরু করল ভুবনেশ্বর থেকে। কলিঙ্গ স্টেডিয়াম হল তাদের ‘হোম গ্রাউন্ড।’

শুধুই ভেনু পরিবর্তন নয়। ওড়িশা সরকার পরিকাঠামোর দিক ছাড়াও আর্থিক ভাবেও সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিল ওড়িশা এফসিকে। হোম ম্যাচ এবং প্র্যাকটিস করার জন্য কোনও রকম আর্থিক দাবি ছাড়াই পুরোপুরি ফ্রি-তে কলিঙ্গ স্টেডিয়াম ওড়িশা এফসিকে দিয়ে দেয় ওড়িশা সরকার। এখানেই শেষ নয় সরকারের তরফে সাহায্যর হাত প্রসারিত করা। মাঠ ছাড়াও, ওড়িশা এফসির ফুটবলারদের থাকার জন্যও সম্পূর্ণ খরচ দিত সরকার। পাশাপাশি যাতায়াতের বাস-সহ ওড়িশা এফসির আরও নানা খরচ বহন করেছে নবীন পট্টনায়েকের সরকার। ভাবনা ছিল, ওড়িশা এফসি-কে সাহায্য করলে, ওড়িশার এফসির হাত ধরে ভারতীয় ফুটবল মানচিত্রে ওড়িশা ফুটবলেরও অনেক উন্নতি হবে। স্থানীয় মানুষের মধ্যে ফুটবল নিয়ে উন্মাদনা তৈরি হবে।

নবীন পট্টনায়েকের বিদায়ের পর মোহন চরণ মাঝি যে মুহূর্তে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, নতুন ক্রীড়া দপ্তরের তরফে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু হয়েছে ওড়িশা এফসির জন্য। কারণ, সরকার আশা করেছিল, ওড়িশা এফসির থেকে এমন কিছু সাহায্য পাওয়া যাবে, যা থেকে সাহায্য হবে ওড়িশার ফুটবলেও। কিন্তু পুরো ব্যাপারটা খতিয়ে দেখা গিয়েছে, ওড়িশা এফসির কোনও অ্যাকাডেমি নেই। পাশাপাশি অনূর্ধ- ১৫, ১৭, ১৮, ১৯ কোনও বয়সভিত্তিক দলই নেই। অর্থাৎ ওড়িশার জুনিয়র ফুটবল ডেভলপমেন্টের ব্যাপারে কোনও সাহায্য বা পরিকল্পনা কিছুই করছে না ওড়িশা এফসি। পাশাপাশি ২০১৯-‘২৪ পর্যন্ত ওড়িশার একজন স্থানীয় ফুটবলারকেও দলে নেয়নি ওড়িশা এফসি।

সবরকম সাহায্য করছে ওড়িশা সরকার। আর খেলতে আসছেন ভিনরাজ্যের ফুটবলাররা। এই ব্যাপারটা ভালোভাবে নিচ্ছে না ওড়িশার বর্তমান সরকার। সেই কারণেই ঠিক হয়েছে, সরকারের তরফে সবরকম আর্থিক সাহায্য বন্ধ করে দেওয়া হবে ওড়িশা এফসির জন্য। তবে ম্যাচের দিন কলিঙ্গ স্টেডিয়াম ব্যবহার করার জন্যও সরকারের তরফে অর্থ দাবি করা হবে নাকি অর্থ ছাড়াই খেলতে দেওয়া হবে, তা এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলা হয়নি। ঠিক হয়েছে, একটি পেশাদার ক্লাব হিসেবে আইএসএলে খেলতে গেলে যেভাবে অন্য ক্লাবগুলি খেলে, সেভাবেই খেলতে হবে ওড়িশা এফসিকে। সরকারের তরফে যাবতীয় অনুদান বন্ধ। ওড়িশা সরকারের এই সিদ্ধান্তের পর অনেকেই বুঝে উঠতে পারছেন না, এরপর ওড়িশা এফসির ভবিষ্যৎ কী? হয় তাদের সম্পূর্ণ আর্থিক ভার মাথায় নিয়ে খেলতে হবে। নাহলে ফের খুঁজতে হবে নতুন ভেনু। খেলতে হবে অন্য কোনও রাজ্যে। অন্য কোনও শহরে।

Leave a Reply