অর্পণ দাস: ব্রহ্মপুত্র তীরেও ছবিটা বদলাল না। আইএসএলে আরও একবার মোহনবাগানের কাছে পরাস্ত হল ইস্টবেঙ্গল। ম্যাকলারেনের ১.৩৮ মিনিটের গোলে পিছিয়ে পড়ে লাল-হলুদ বাহিনী। সেই ধাক্কা সামলে আর গোল তুলতে পারেননি ক্লেটনরা। এর মধ্যে আছে পেনাল্টি ও সৌভিকের হলুদ কার্ড বিতর্ক। কিন্তু সেই সবের ঊর্ধ্বেও রয়েছে ম্যাচের খুঁটিনাটি। দুই কোচের মস্তিষ্কের লড়াই। আরও একটা প্রশ্ন। ডার্বির উত্তাপ কি অনেকটাই ফিকে? সেসব নিয়ে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালে ময়নাতদন্তে দুই প্রধানের দুই প্রাক্তনী শিল্টন পাল ও মেহতাব হোসেন।
বাঙালির আবেগের ডার্বি এবার অনুষ্ঠিত হয়েছে গুয়াহাটিতে। পৌষের শীতে যুবভারতীর ডার্বির কি উত্তাপের অভাব অনুভব করল আপামর বাঙালি? ম্যাচের মধ্যেও যে একটা ঢিমেতালে ব্যাপার ছিল, সেটা কি ৭০ হাজার জনতার কল্লোলের অভাবের জন্য? মোহনবাগানের ‘বাজপাখি’ শিল্টন পাল সেটা স্বীকার করে নিলেন। তার সঙ্গে আরও একটি বিষয়ে নজর দিলেন। সবুজ-মেরুনের প্রাক্তন গোলকিপারের বক্তব্য, “পয়েন্ট টেবিলে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের দূরত্ব অনেকটাই। মোহনবাগান চ্যাম্পিয়নশিপের দৌড়ে। সেখানে ইস্টবেঙ্গল নীচের দিকে। দুটো টিমের মধ্যে পয়েন্টের ব্যবধান কম থাকলে, ডার্বির উত্তেজনা অন্যরকম থাকে। সেটাই এবার পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।”
তাঁর সংযোজন, “তাছাড়া মোহনবাগান ফেভারিট হয়ে নেমেছে। আমরা আশা করেছিলাম মোহনবাগান জিতবে। আরও বেশি গোলে জিততে পারত।” এই জয়ের ফলে বেঙ্গালুরুর থেকে ৮ পয়েন্ট এগিয়ে গেল মোলিনার দল। লিগ শিল্ডের দৌড়ে কি তাহলে অনেকটাই এগিয়ে গেল তারা? শিল্টন সেটাই বলছেন। তিনি জানালেন, “ডার্বি জিতে মানসিকভাবে অনেকটাই এগিয়ে রইল মোহনবাগান। সতর্ক থাকতে হবে। তবে লিগ শিল্ডের অনেকটা কাছে পৌঁছে গেল মোহনবাগান। যেরকম দল আছে, যেরকম ধারাবাহিকতা আছে, তাতে পেত্রাতোসদের ছোঁয়া মুশকিল।” মোলিনার অধীনে খেলার সুবাদে জানেন, মোহনবাগান কোচ কীভাবে সুপরিকল্পিত ভাবে মাঠে নামেন। সেটাই পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে, জানালেন শিল্টন।
অন্যদিকে এই গুয়াহাটিতেই ২০০৯ সালে ফেড কাপের ডার্বি জিতেছিল ইস্টবেঙ্গল। সেখানে গোল করেছিলেন মেহতাব হোসেন। আজও বারবার আলোচনায় ফিরে আসে সেই ম্যাচের কথা। ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ‘মিডফিল্ডার জেনারেল’ কিছুটা হতাশ খেলা দেখে। অস্কারের দলের থেকে আরও আক্রমণাত্মক, আরও সাহসী ফুটবল দেখতে চেয়েছিলেন তিনি। কীভাবে? সেটাও ব্যাখ্যা করে দিলেন, “পিভি বিষ্ণু বারবার গতিতে, স্কিলে পরাস্ত করছিল আশিস রাইকে। কিন্তু এর বাইরে কী দেখলাম? বিষ্ণু মনবীর সিংকে সামলাতে ব্যস্ত হয়ে গেল। ফলে যখন উঠছে, তখন অ্যাটাকিং থার্ডে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ছিল। ওকে নিয়ে আরও ঝুঁকি নিতে পারতেন অস্কার। আমার ধারণা, বিষ্ণু আরও আক্রমণে উঠলে মোলিনাও বাধ্য হতেন মনবীরকে নীচে নামিয়ে আনতে। তাছাড়া লিগ টেবিলে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে ইস্টবেঙ্গল। আরও সাহসী ফুটবল খেলা উচিত ছিল।”
তবে অস্কারেই ভরসা রাখছেন মেহতাব। তাঁর সাফ বক্তব্য, “প্রত্যেকটা মানুষেরই একটা খারাপ সময় চলে। ইস্টবেঙ্গলেরও সেটাই চলছে। আশা করি, এটা দ্রুত চলে যাবে। অস্কার ব্রুজোর উপর আস্থা রাখা উচিত। টিম গোল খেলেও লড়াই করছে। যে দলটা ছয় ম্যাচ জেতেনি, তাকে এশিয়ার মঞ্চে ম্যাচ জেতাচ্ছেন। আইএসএলেও ম্যাচ জিতেছে। চোট-আঘাতের মধ্যেও দলটা যথেষ্ট গুছিয়ে নিয়েছেন।” তবে মেহতাব স্বীকার করে নিচ্ছেন, ডার্বি জিতলে সুপার সিক্সের লড়াইয়েও ফিরে আসতে পারত ইস্টবেঙ্গল। সেটা এবার হয়নি। কিন্তু হাল ছাড়তে নারাজ মেহতাব।