স্টাফ রিপোর্টার: ইডেন থেকে বেরোনোর সময় ক্লাব হাউসের গেটে জনা দশেক স্কুল ছাত্র ঘিরে ধরলেন তাঁকে। সেলফি চাই। অটোগ্রাফ চাই। হাসি মুখে ওঁদের আবদার মিটিয়ে ইডেনের ‘এল’ ব্লকের দিকে হাঁটা দিলেন ঋদ্ধিমান সাহা।
মুখে পরিচিত সেই হাসি। অভিষেক পোড়েলকে সঙ্গে নিয়ে ছবি তোলার পর সময় কেউ একটা বলে উঠলেন-‘বাংলা ক্রিকেটের প্রাক্তন ও বর্তমান।’ প্রতিবাদের সুরে অভিষেক বলে উঠলেন, ‘‘ঋদ্ধিদা এখনও বর্তমান। এখনও প্রাক্তন হয়ে যায়নি।’’ এটা ঠিক যে ঋদ্ধি রনজিতে পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে আরও একটা ম্যাচ খেলবেন। কিন্তু তিনি নিজেও জানেন ক্রিকেট কেরিয়ারের একেবারে সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে তিনি। চার দিন পর ক্রিকেট কিট চিরকালের মতো তুলে রাখবেন। ম্যাচের আগে আর ওয়ার্ম আপ করতে নামতে হবে না। ভোরবেলা উঠে মাঠে যাওয়ার তাড়া থাকবে না। কিন্তু এসবের কোনওটাই ঋদ্ধিকে আবেগের সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারে না। বরং বলে যান, ‘‘একদিন না একদিন সবাইকেই ক্রিকেট ছাড়তে হয়। আমিও ছাড়ছি। তাছাড়া এতদিন ধরে খেলেছি। জানতাম এই দিনটা আসবেই। তাছাড়া আমার সঙ্গে যাঁরা মিশেছেন, তাঁরা সবাই জানেন আমি খুব একটা আবেগপ্রবণ নই।’’
সিএবিও চাইছে ঋদ্ধির বিদায় মুহূর্তটাক মনে রাখার মতো করে তুলতে। সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘আমি ম্যাচের আগে ঋদ্ধির সঙ্গে দেখা করব। অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে অবশ্যই একটা ফেয়ারওয়েলের ব্যবস্থা করা হবে। ওর সঙ্গে কথা বলে দেখি যে ঋদ্ধি কবে ফাঁকা থাকবে।’’ ঋদ্ধি নিজে আবেগতাড়িত না হলে কী হবে, তাঁর সতীর্থরা কিন্তু বড্ড আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ছেন। অধিনায়ক অনুষ্টুপ মজুমদারের যেমন বারবার সেই অনূর্ধ্ব উনিশ বাংলা টিমের হয়ে খেলার কথা বলছেন। ঋদ্ধি আর অনুষ্টুপ–দু’জনেরই অনূর্ধ্ব উনিশ বাংলা টিমের হয়ে একই ম্যাচে অভিষেক ঘটেছিল। লক্ষ্মীরতন শুক্লার অধিনায়কত্বে সিনিয়র টিমে অভিষেক হয়েছিল ঋদ্ধির। সেই লক্ষ্মী আজ টিমের কোচ। সুদীপের মনে বহু স্মৃতি ভিড় করে আসছিল। পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে রনজি গ্রুপের শেষ ম্যাচের সে অর্থে কোনও গুরুত্ব নেই বাংলার কাছে। জিতলেও নকআউটের সম্ভাবনা খুব একটা নেই। কিন্তু এটাই যে বাংলার অন্যতম সেরা ক্রিকেটারের অবসর ম্যাচ হতে চলেছে। শিলিগুড়ি থেকে ঋদ্ধির মা-বাবার আসার কথা ছিল। কিন্তু কোনও কারণে তাঁরা আসতে পারছেন না। তবে ঋদ্ধির স্ত্রী-সন্তানরা থাকবেন ইডেনে। মেয়ে আনভি চেয়েছিল বাবা অন্তত আরও একটা বছর খেলুক। কিন্তু ঋদ্ধি নিজেই আর খেলা চালিয়ে যেতে চাননি। বলছিলেন, ‘‘আমি গত বছরই অবসরের সিদ্ধান্ত ঠিক করে নিয়েছিলাম। ঠিক করেছিলাম যে এটাই আমার শেষ বছর হতে চলেছে। শুধু শুধু কেন খেলে যাব বলুন? সামনে আমার কি কোনও আলাদা ভিশন রয়েছে? জাতীয় দলের হয়ে আমি আর খেলব না। তাই আমি শুধু চুইংগাম কিংবা মেগা সিরিয়ালের মতো ক্রিকেট কেরিয়ার টেনে নিয়ে যেতে চাইনি। অনেক সিরিয়াল হয় যেটা শেষ হতে চায় না। আমি সেভাবে কেরিয়ার জোর করে টেনে নিয়ে যেতে চাইনি।’’
কেরিয়ারের শুরুতেও যেরকম ছিলেন, শেষবেলাতেও ঠিক একই রকম রয়ে গিয়েছেন। শেষ ম্যাচেও নিজের জন্য কোনও মাইলস্টোন সেট করেননি। বরং বলে গেলেন, ‘‘টিমের যেটা প্রয়োজন হবে, সেটাই করব। আমার কাছে সবসময়ই টিম প্রাধান্য পেয়েছে। আমি যদি কুড়ি-তিরিশ রানও করি, আর তাতে যদি টিম জেতে, সেটাই আমার কাছে তৃপ্তির।’’ বাংলা টিম চাইছে পাঞ্জাব ম্যাচ জিতে ঋদ্ধিকে বিদায়ী সংবর্ধনা দিতে। এই ম্যাচে দলে বেশ কয়েকটা বদল হতে চলেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে ফলো করুন
(function(d, s, id){ var js, fjs=d.getElementsByTagName(s)[0]; if (d.getElementById(id)) return; js=d.createElement(s); js.id=id; js.src="https://connect.facebook.net/en_GB/sdk.js#xfbml=1&version=v3.0&appId=613665185492388&autoLogAppEvents=1"; fjs.parentNode.insertBefore(js, fjs); } (document, 'script', 'facebook-jssdk'));